Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মুক্তিযোদ্ধা ভাতা

এ যাবতকালে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় অর্জন-স্বাধীনতা। স্বাধীনতার চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এ অর্জন এতোটুকু ম্লান হয়নি; অন্য কোনো কিছুই ধারে কাছে আসতে পারেনি এর। দীর্ঘ সময়ের পরাধীনতা, দাসত্বের মুক্তি ঘটেছে ছোট অথচ শক্তিশালী ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির আবির্ভাবে। স্বাধীনতা এমনি এমনি এসে ধরা দেয়নি, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই অর্জন করতে হয়েছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ নারীর ইজ্জতকে বলিদান করতে হয়েছে এর পেছনে। কিন্তু এতো ত্যাগ-তিতিক্ষা আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ কতটুকু সঠিক পথে রয়েছে? সেই স্বপ্ন ও আকাঙক্ষার স্ফূরণ কি রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে না, নিষ্ঠুরভাবে! স্বাধীনতার গৌরব এবং চেতনা প্রতিনিয়ত ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এ যাবতকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শাসকশ্রেণিরাও এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় শুশ্রূষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দুঃখজনকভাবে তৈরি হচ্ছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১-এ যার জন্মই হয়নি, সে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বগলদাবা করে বসে আছে! সার্টিফিকেট বাণিজ্য ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক রকম বাণিজ্য হচ্ছে। বাণিজ্যের পাশাপাশি ইতিহাস বিকৃতিও কম হচ্ছে না। এই বিকৃতি রোধ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা অপতৎরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন একমাত্র মুক্তিযোদ্ধারাই। কিন্তু নানা কারণে এই জায়গাটিতেও বিরাজ করছে শূন্যতা। প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের ভাষা আজ স্তব্ধ।

এ বন্ধ্যাকালে, স্তব্ধতা কাটিয়ে এগিয়ে এসেছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের একজন লড়াকু যোদ্ধা আহমেদ আমিন চৌধুরী। জনাব আহমেদ আমিন চৌধুরীকে অনেকেই ইতিহাস ঐতিহ্য অনুরাগী তেজস্বী লেখক হিসেবেই জানেন। তাঁর বাবা ছিলেন চট্টল গবেষক আবদুল হক চৌধুরী-উত্তর প্রজন্মের কাছ পাওয়া দায়বদ্ধতায় তিনি একের পর এক কাজ করে চলেছেন। নানা বিষয়ে বই লিখছেন, তার মধ্যে বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের কৃষ্টি-সংস্কৃতি। লেখকসত্তার পাশাপাশি তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি সেভাবে উঠে আসেনি। হয়তো তিনিই সহজাত বিনয়ে আড়াল করে রেখেছেন। চারদিকে যখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধ-ব্যবসায়ীদের ছড়াছড়ি-এ অবস্থায় আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের আড়ালে নিয়ে যেতে চাইতেই পারেন-খুব স্বাভাবিক। তাই বলে পরবর্তী প্রজন্মকে জানাতে হবে না কীভাবে এ দেশ তাদের হয়েছে? কীভাবে একটি পতাকা ওড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে তারা! এ পতাকার মর্যাদা রক্ষা করাটাও যে পবিত্র দায়িত্ব।

উত্তরসূরিদের জন্য ইতিহাস রেখে যেতে হবে, নইলে তাদের ভ্রান্তি এবং চোখের সামনের কুয়াশা আরো বাড়তেই থাকবে। বর্তমানের টালমাটাল সময়ের জন্য সঠিক ইতিহাস জানাটা খুবই জরুরি। নইলে হারিয়ে যাবে, বিকৃত হতেই থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো আর কবির কবিতা লেখার মতো কোনো বিষয় না-মন চাইলো তো কবিতার গুরুকে দিলাম আকাশে উড়িয়ে!

লেখকের জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান থানায়। তাঁর যোদ্ধা-জীবনের বড় একটি অংশজুড়ে আছে রাউজান। নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে দেখেছেন চারপাশের নানা অনুষঙ্গ। সেদিনের সেই ছোট ছোট ঘটনাগুলোই আজ ইতিহাসের স্বর্ণরেণু। এই স্বর্ণরেণুকে নির্মোহ দৃষ্টিতে ধরতে চেয়েছেন আহমেদ আমিন চৌধুরী। বইটির ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে তা। শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়টুকুই নয়-প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় লেখক রাউজানের পূর্বাপর ইতিহাসের ডালপালা মেলে ধরেছেন। প্রচুর ছক এবং ম্যাপ ব্যবহার করেছেন। ম্যাপের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে রাউজানের ১৩টি বধ্যভূমি-মধ্য গহিরা শীলপাড়া, গহিরা বিশ্বাস বাড়ি, গহিরা পালিতপাড়া, কুণ্ডেশ্বরী ভবন, বাড়ুইপাড়া, জগৎমল্লপাড়া, জানালিহাট বণিকপাড়া, ছিটিয়াপাড়া সুলতানপুর. রাউজান পালিতপাড়া, ঊনসত্তরপাড়া, পাহাড়তলী, নোয়াপাড়া ও হলদিয়া। সন্নিবেশিত হয়েছে রাউজানের কৃতী ব্যক্তিদের তালিকা।

মুক্তিযুদ্ধকে শুধু ৭১-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনাই শুধু নয়-ব্রিটিশ আমল থেকে স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণ দলিলের বঙ্গানুবাদ, শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রাসঙ্গিক দলিল, রাউজানের শহীদদের কবর ও বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ, আওয়ামী লীগের ছয় দফা, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ, রাউজানের গ্রাম পরিচিত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি, দর্শনীয় স্থান, রাউজান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা তালিকা- ২০০৫- বাংলাদেশ গেজেট (অতিরিক্ত, নভেম্বর) অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও গ্রামের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যকারী ব্যক্তিবর্গসহ পুরো রাউজানকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন অনেক বিষয়ের সন্নিবেশ ঘটেছে বইটিতে।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি স্থান পেয়েছে বিভিন্ন সময়ের রাউজানের এমএনএ অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, আব্দুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী, ফজলুল কবির চৌধুরী। আওয়ামী লীগের শুরুর দিককার রাজনীতির ইতিহাস অনুসন্ধিৎসুদের কৌতূহল নিবৃত্তকরণে ভূমিকা রাখবে এ বই।

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে রাউজানের আপামর শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, সাহায্যকারী, নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠী ও অকুতোভয় আশ্রয়দাতাদের উদ্দেশে।

এমন একটি সময়োপযোগী কাজ করার জন্য আহমেদ আমিন চৌধুরী এবং বলাকা প্রকাশনকে ধন্যবাদ না জানালেই নয়। মুক্তিযুদ্ধকে যারা দেখেছেন, জেনেছেন, বুঝেছেন তাঁরা বয়সের ভারে নূব্জ্য হয়ে চলে যাচ্ছেন একে একে। ইতিহাসকে নিয়ে যে টানাহেঁচড়া তার কোনো অবসান ঘটছে না। এমতাবস্থায় আহমেদ চৌধুরীর মতো অন্য মুক্তিযোদ্ধাদেরও এগিয়ে আসা খুবই জরুরি। লেখনীর মাধ্যমে বা অন্যভাবে।

ইতিহাসের আলোকে মুক্তিযুদ্ধ ও রাউজান

আহমেদ আমিন চৌধুরী

প্রকাশক : বলাকা প্রকাশন

প্রচ্ছদ : মেরুন হরিয়াল

প্রকাশকাল : আগস্ট ২০১২